বিশ্বের সবথেকে বড় টি-টোয়েন্টি লীগ হলো আইপিএল অর্থাৎ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ। এবছর আইপিএলের ১৫ বছর পূর্ণ হলো। বিশ্বের প্রায় সমস্ত প্রথম সারির ক্রিকেটারদেরকেই আইপিএলে অংশ নিতে দেখা যায়। অনেক তরুণ ক্রিকেটার এই আইপিএলের মাধ্যমেই তাদের সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে, আবার অনেক বড় বড় খেলোয়াড়কেও এই আইপিএলে ব্যার্থ হতে দেখা গেছে।

শচীন টেন্ডুলকার:-
আইপিএলে রান বানানোর ব্যাপারে লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারও কারোর থেকে পেছনে নেই। নিজের ক্রিকেট জীবনে উনি প্রচুর নতুন ইন্টারন্যাশনাল রেকর্ড বানিয়েছেন আবার অনেক বড় বড় রেকর্ড ভাঙতেও সক্ষম হয়েছেন। শচীন টেন্ডুলকার হলেন প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার যিনি অরেঞ্জ ক্যাপ নিজের নামে করেছিলেন। আইপিএলের প্রথম দুই সিজনে চোটের জন্য খুব কম সংখ্যক ম্যাচই খেলেতে পেরেছিলেন লিটল মাস্টার। ২০১০ এর আইপিএলে ১৫ ম্যাচে গড়ে ৪৭.৫৩ রান প্রতি ম্যাচ এবং ১৩২.৬১ এর স্ট্রাইক রেটে ৬১৮ রান বানিয়ে অরেঞ্জ ক্যাপ নিজের নামে করতে সক্ষম হন শচীন। ২০১০ আইপিএলে রয়াল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে সচিন অপারাজিত থাকেন এবং সর্বাধিক ৮৯ রান বানান।এই সিজনে উনি ৫টি অর্ধশতকও বানিয়েছিলেন।
শচীন টেন্ডুলকারের আইপিএল ক্যারিয়ার:-
ম্যাচ সংখ্যা | ৭৮ |
মোট রান | ২৩৩৪ |
স্ট্রাইক রেট | ১১৯.৮১ |
গড় রান | ৩৮.৮৩ |
অর্ধ শতক | ১৩ |
শতক | ১ |
রবিন উথাপ্পা:-
একটা দুটো আইপিএল ছেড়ে দিলে রবিন উথাপ্পার আইপিএলে প্রদর্শন খুবই ভালো। রবিন খুবই প্রতিভাশালী একজন ক্রিকেটার কিন্তু তার প্রতিভা অনুযায়ী তিনি সেইভাবে নাম করতে পারেননি। আইপিএল ২০১৪ তে গৌতম গম্ভীরের অধিনায়কত্বে কলকাতা নাইট রাইডার্স দ্বিতীয়বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হন। কেকেআর এর চ্যাম্পিয়ন হবার পিছনে উথাপ্পা খুবই বড় ভূমিকা পালন করেন। এই সিজনে উথাপ্পা ১৬ ম্যাচে ৪৪ রান প্রতি ম্যাচ গড়ে ১৩৭.৭৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ৬৬০ রান বানিয়ে ছিলেন এবং অরেঞ্জ ক্যাপের উপর নিজের অধিকার জমিয়েছিলেন। এই সিজনে রবিন ৫ টি অর্ধশতকও বানিয়েছিলেন। আইপিএলের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথমবার যখন বিজয়ী টিমের কোনো প্লেয়ার অরেঞ্জ ক্যাপ জিতেছিলেন।
বিরাট কোহলি:-
আইপিএল ২০১৬ ছিল বিরাট কোহলির জন্য গোল্ডেন একটা বছর। স্পিনার হোক বা ফাস্ট বোলার কাউকেই ছেড়ে কথা বলেননি বিরাট সবাইকেই নিজের বাটের সাথে খুবই ভালো ট্রিটমেন্ট দিচ্ছিলেন। রান মেশিন কোহলি ২০১৬ আইপিএল সিজনে বিরাট রূপ ধারণ করে ১৬ ম্যাচে ৮১.০৮ রান প্রতি ম্যাচ গড়ে ১৫২.০৩ স্ট্রাইক রেটে ৯৭৩ রান বানিয়েছিলেন। এখনো পর্যন্ত আইপিএল ইতিহাসে কোনো ব্যাটসম্যানের একটা সিজনে বানানো এটাই সর্বাধিক রান। এই সিজনে বিরাট ৭ টি অর্ধশতক এবং ৪ টি শতক বানিয়েছিলেন। এত ভালো প্রদর্শনের মাধ্যমে অরেঞ্জ ক্যাপ হোল্ডার বিরাট তার রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর টিমকে ফাইনালে নিয়ে যেতে পারলেও চ্যাম্পিয়ন বানাতে সক্ষম হননি।
কে এল রাহুল:-
২০২০ আইপিএল ছিল রাহুলের জন্য ক্যারিয়ার চেঞ্জিং একটা সিজন। বারবার ভালো প্রদর্শন করার পরও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা রাহুলকে কেবলমাত্র একজন ভালো টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসাবেই মনে করতেন। কিন্তু ২০২০ সালে বারবার ভালো প্রদর্শনের মাধ্যমে রাহুল এই ধারণা ভেঙে দিতে সক্ষম হন এবং নিজেকে তিনটি ফরম্যাটের জন্য যোগ্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। ২০২০ আইপিএল সিজনে রাহুল ১৪ টি ম্যাচে ৫৫.৮৩ রান প্রতি ম্যাচ গড়ে ১২৯.৩৪ এর স্ট্রাইক রেটে ৬৭০ রান বানিয়েছিলেন এবং অরেঞ্জ ক্যাপ অধিকার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সিজনে রাহুল ৫ টি অর্ধশতক এবং ১ টি শতক বানিয়েছিলেন।
ঋতুরাজ গায়কয়াড়:-
আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সবথেকে কম বয়সী অরেঞ্জ ক্যাপ হোল্ডার হলেন ঋতুরাজ গায়কয়াড়। ২০২১ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের তরফ থেকে ওপেন করতে দেখা যায় ঋতুরাজকে। প্রথম কয়েকটি ম্যাচে ঋতু সেভাবে প্রদর্শন করতে না পারলেও ২০২১ আইপিএলের শেষপর্যন্ত ভালো প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি অরেঞ্জ ক্যাপ জিততে সক্ষম হন।২০২১ সালে করোনার কারণে যখন আইপিএল ইউ-এ-ই তে নিয়ে যাওয়া হয় তখন বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন চেন্নাই ইউ-এ-ই তে ভালো ফল করতে পারবেন না। কিন্তু ঋতুরাজ ইউ-এ-ই তে খুবই ভালো প্রদর্শন করেন এবং সুপার কিংসকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০২১ আইপিএলে ঋতুরাজ গায়কয়াড় ১৬ টি ম্যাচে ৪৫.৩৫ রান প্রতি ম্যাচ গড়ে ১৩৬.২৬ স্ট্রাইক রেটে ৬৩৫ রান বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সিজনে ঋতু ৪ টি অর্ধশতক এবং ১ টি শতক বানিয়েছিলেন।
শুভমন গিল:-
আইপিএল ইতিহাসে সবথেকে কম বয়সী অরেঞ্জ ক্যাপ হোল্ডার হলেন শুভমন গিল। ২০২৩ আইপিএল শুরু থেকেই শুভমন গিলকে দুর্দান্ত ফর্মে দেখা যায়। গুজরাট টাইটানসকে ২০২৩ আইপিএল ফাইনালে পৌছাতে শুভমনের অবদান অনবদ্য। যদিও এই তরুণ খেলোয়াড় তার দলকে ফাইনালে জেতাতে পারেননি, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শুভমনের এই ইনিংশের পর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ২০২৩ আইপিএলে শুভমন গিল ১৭ টি ম্যাচে ৫৯.৩৩ রান প্রতি ম্যাচ গড়ে ১৫৭.৮০ স্ট্রাইক রেটে ৮৯০ রান বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সিজনে গিল ৪ টি অর্ধশতক এবং ৩ টি শতক বানিয়েছিলেন।